বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৬, ২০০৯

তালেবানি হুমকির কবলে পাকিস্তানের বৌদ্ধ ঐতিহ্য

তালেবানি উত্থানের প্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে গেছে পাকিস্তানের বৌদ্ধ ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সোয়াত জাদুঘর, পেশাওয়ারের জাদুঘরে বিদেশি পর্যটকরা যেতে পারছেন না। গান্ধার শিল্পকলার প্রাণকেন্দ্র তক্ষশিলাতেও নেই পর্যটকের ভিড়।

খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে শুরু করে ২য় খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বৌদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পচর্চার গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য সমৃদ্ধ তক্ষশিলা রাজধানী ইসলামাবাদের মাত্র ২০ কিলেমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের লাগাতার তালেবানি সহিংসতায় তক্ষশিলাও এখন নিরাপদ নয়।

প্রাচীন গান্ধার রাজত্বের অপর প্রত্নতীর্থ বর্তমান আফগানিস্তানের বামিয়ানে ২০০১ সালে যুগল বুদ্ধমূর্তি বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে তালেবান গোষ্ঠী বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। সে সময় থেকেই পাকিস্তানে উগ্রপন্থী এই ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান চলছে। বামিয়ানের মতো সেখানকার বৌদ্ধ প্রত্নসম্ভারও মৌলবাদীদের শ্যেনদৃষ্টির কবলে আছে।

লিংকটি দেখুন

বুধবার, নভেম্বর ১৮, ২০০৯

প্রসঙ্গ: মেজর ডালিম

আজকের প্রথম আলোনারীমঞ্চ পাতায় হামিদা সেরনিয়াবত (আবদুর রব সেরনিয়াবতের কন্যা)-এর লেখা সেই রাতের কথা পড়ছিলাম। লেখাটির শেষ পর্যায়ের মেজর ডালিম মামিকে (বেগম মুজিব) মা বলে ডাকত। এই বাক্যটিতে আমার চোখ আটকে গেল।
উপরের তথ্যটি ছাপা অক্ষরে এর আগে দেখিনি। বাঁকা হরফের এই বাক্য দ্বারা অনুমিত হয় যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে মেজর ডালিমের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল কিংবা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তাঁর অবাধ (?) যাতায়াত ছিল।
১৯৭৫-এ আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। '৭৫-র পরবর্তী সময়ে সিনিয়র অনেকের মুখ থেকে একাধিকবার শুনেছি যে, মেজর ডালিমের স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ছেলে কর্তৃক লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতেই নাকি তিনি বিপথগামী সেনা অফিসারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ১৫ আগস্টের ঘটনায় অংশীদার হয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে কেউ রেফারেন্স/লিংক/তথ্য দিলে আমার বিভ্রান্তি দূর হয়।

বুধবার, নভেম্বর ০৪, ২০০৯

প্রসঙ্গ: অর্পিত সম্পত্তি

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস অনুসারে ১৯৬৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যান, তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তির নাম পরিবর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি করা হয়।
লিংক
কক্সবাজার ও বৃহত্তর বরিশাল জেলার রাখাইনরা তো ভারতে যাননি, গেছেন বর্মায় (অধুনা মিয়ানমার)। তাও রাজনৈতিক কারণে নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশাল জেলার রাখাইনরা দেশান্তরী হয়েছেন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে। তাঁদের রেখে/ফেলে যাওয়া জায়গাজমিগুলো অর্পিত সম্পত্তি হয় কী করে? রাখাইনদের তথাকথিত অর্পিত সম্পত্তিগুলোর খুব সামান্য অংশ পারিবারিক অংশীদারদের দখলে রয়েছে, এর বেশির ভাগ অংশই বেদখল করে রেখেছে প্রতিবেশী প্রভাবশালী মুসলমানরা।
আশা করি, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০০৯-এর বলে রাখাইনদের তথাকথিত অর্পিত সম্পত্তিগুলো প্রকৃত পারিবারিক অংশীদাররা ফেরত পাবেন।

মঙ্গলবার, নভেম্বর ০৩, ২০০৯

সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তি বৈধ মালিকেরা ফিরে পাবেন

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০০৯ মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। সংসদে আইনটি পাস ও কার্যকর হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব অর্পিত সম্পত্তি বৈধ মালিকের ফেরত পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্পিত সম্পত্তি বৈধ মালিকেরা ফেরত পেতে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালে দাবিনামা পেশ করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনাল বিচার-বিশ্লেষণ করে যে রায় দেবেন, তা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বৈঠকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন) ২০০৯-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধন), বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধন) ও পরিবেশ আদালত আইন নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস-সচিব মাহবুবুল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন (সংশোধন): এ আইন সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, পুরো আইনটি কী, তা দেখে মন্তব্য করা যাবে। তবে যতটুকু জানা সম্ভব হয়েছে তাতে দেখা যায়, আইনে অর্পিত সম্পত্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোনো একটি পরিবারের চার অংশীদারের তিনজন ভারতে গেলে সেই তিনজনের সম্পত্তি অর্পিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, যিনি বাংলাদেশে রয়েছেন তিনি পুরো সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন। কারণ অবণ্টিত এজমালি সম্পত্তির ক্ষুদ্র অংশীদারও একজন হক দাবিদার। সে জন্য গোড়াতেই ঘোষণা থাকা দরকার, কোন সম্পত্তি অর্পিত বলে বিবেচনা করা হবে না।
বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, ট্রাইব্যুনালকে আইন অনুযায়ী বিচারের সুযোগ দেওয়া হলে যেকোনো একজনকে পুরো সম্পত্তি প্রদানে রায় দিতে হবে এবং রাষ্ট্র সে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। বর্তমান আইনে যেভাবে বলা হচ্ছে, তাতে মামলা-জটিলতা বাড়বে। সমস্যার কোনো সমাধান হবে না; বরং যুগ যুগ ধরে নতুন নতুন মামলার উদ্ভব হবে।
আইনটি সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০১ সালে এ আইন পাস হয়েছিল। আবার সাত বছর পর কেন আইনটি আনা হলো, কী কারণে ঘটেছে, আমি জানি না। এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আইনটি আমার কাছে এলে এ সম্পর্কে বলতে পারব।’
আইনে যা থাকছে: সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। ২০০২ সালে আইনটির একটি ধারা সংশোধন করে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের সময় অনির্দিষ্টকাল করে দেওয়া হয়। ২০০১ সালের আইনে আইন পাসের পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির সরকারি তালিকা প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল। গতকাল মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সংশোধনী অনুযায়ী আইনটি পাস হওয়ার ২১০ দিনের মধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা আছে। সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের পরই এ আইনের কার্যকারিতা শুরু হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশে তালিকাভুক্ত মোট অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ছয় লাখ ৪৩ হাজার ১৩৬ দশমিক ৯০ একর। এর মধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি এক লাখ ৯৭ হাজার ২১৪ দশমিক ১৪ একর। এসব সম্পত্তি বর্তমানে সরকারের দখলে আছে। বাকি চার লাখ ৪৫ হাজার ৯২২ দশমিক ৭৬ একর সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হলেও তা সরকারের দখলে নেই।
সূত্র জানায়, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী ব্যক্তিগত দখলে থাকা তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তিতে (চার লাখ ৪৫ হাজার ৯২২ দশমিক ৭৬ একর) যাঁদের দাবি আছে তাঁদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটিতে আবেদন করতে হবে। দাবির সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কমিটিকে দেখাতে হবে। উপজেলা কমিটি সুপারিশ করলে আবেদনকারী জেলা কমিটিতে যাবেন। জেলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সম্পত্তি অবমুক্ত করা হবে। যে সম্পত্তিতে কারও দাবি বৈধ বলে গৃহীত হবে না, তা সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, সংশোধনীতে তালিকাভুক্ত সম্পত্তির বিরোধ নিরসনের জন্য তিন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই কমিটির কথা বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে জেলা কমিটি থাকবে। সংশ্লিষ্ট সাংসদেরা কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন। এ ছাড়া ভূমিসচিবকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকবে। ভূমিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এ কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন।
সূত্র জানায়, উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তে কেউ অসন্তুষ্ট হলে তিনি জেলা কমিটি এবং পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবেদন করতে পারবেন। উপজেলা কমিটি ১২০ দিন, জেলা কমিটি ৩০ দিন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
তত্কালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলস অনুসারে ১৯৬৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব নাগরিক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যান, তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তির নাম পরিবর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি করা হয়।
অর্পিত সম্পত্তির দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসনের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করে। ২০০২ সালে বিএনপি সরকার আইনটির কতিপয় ধারার সংশোধন করায় প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি।
বাংলাদেশ প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইনস সংশোধন: এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইনস সংশোধন করা হয়। উপ প্রেস-সচিব জানান, সংশোধনী অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন।
(সৌজন্যে: প্রথম আলো, ০৩ নভেম্বর ২০০৯)

কক্সবাজারের হালনাগাদ ভোটার তালিকাতেও ১৫ হাজার রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের চার উপজেলা—সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সদ্য সমাপ্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকাতেও মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী ১৫ হাজার রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখন রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে পুনরায় হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ওই চার উপজেলায় নতুন ভোটার হয়েছেন ৪৩ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে রামুতে ১০ হাজার ৭৭১, সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৫১৩, উখিয়ায় নয় হাজার ৫০৯ ও টেকনাফে সাত হাজার ৮৭৯ জন। শতকরা হিসেবে রামুতে আট দশমিক ৮৬, সদর উপজেলায় সাত দশমিক ৬৬, উখিয়ায় নয় দশমিক ৯২ ও টেকনাফে সাত দশমিক ০৩ ভাগ ভোটার বেড়েছে।
সারা দেশে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির শতকরা হার চার ভাগ। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এ হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অবস্থা বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সূত্রমতে, চার উপজেলায় অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
সরেজমিন কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে খোদ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন জানান—সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে যে হালনাগাদ ভোটার তালিকা হয়েছে তাতে শতকরা ৩০ ভাগ রোহিঙ্গা। এদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনি দায়ী করলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংসদসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। আইনের আওতায় পুনরায় রোহিঙ্গামুক্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির আশ্বাস দেন তিনি। তিনি জানান, যতদিন হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরি হবে না, ততদিন ইউনিয়ন পরিষদসহ সব স্থানীয় নির্বাচন বন্ধ থাকবে। গত ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে রামু, সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা পরিদর্শন করে হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। এসময় তিনি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নানা উপায়ে ভোটার করার অভিযোগের প্রমাণ পান। তিনি রোহিঙ্গামুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন ওইদিন সন্ধ্যায় শহরের হিলডাউন সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের কাছে কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়ার পর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বা্চন কমিশনার বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়াতে রোহিঙ্গাদের এদেশের নাগরিক হিসেবে সনদ দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায়।
এ সময় উপস্থিত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, চার উপজেলায় শিগগির শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে ১৫ সদস্যের একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হচ্ছেন সদস্যসচিব। কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
(সৌজন্যে: প্রথম আলো, ২২ অক্টোবর ২০০৯)

মিয়ানমার সীমান্তে তিন কারণে ৬০ কিলোমিটার বেড়া

তিনটি কারণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে সে দেশের সামরিক জান্তা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও অন্তত ৫০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ পরিকল্পনা সফল করতে সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। বেড়া নির্মাণের তিনটি কারণ হচ্ছে: জঙ্গি তত্পরতা বা হামলা প্রতিরোধ, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো, চোরাচালান বন্ধ করে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জঙ্গি তত্পরতা বন্ধ: সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের চারটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ে আস্তানা গেড়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এসব জঙ্গি সংগঠন মাঝে মধ্যে আরাকান রাজ্যে হামলা করে থাকে। বিলি করে প্রচারপত্র। এদের হামলা থেকে রক্ষা পেতে সামরিক জান্তা মিয়ানমার সীমান্তের ২৮৮ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের মংডু শহরের মেডং নদী বা খাল থেকে উত্তর দিকে বলিবাজার পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বলিবাজার থেকে তুমব্রু হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের স্থলভাগের আরও ৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে।
টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের মংডু শহরের প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী জানান, আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘আরএসও’ (আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন), ‘আরিফ’ (আরাকান ইসলামিক ফ্রন্ট)সহ অন্তত চারটি সংগঠনের জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এতে সামরিক জান্তা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে এ কারণে মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে তারা।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অন্য দেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইলে সীমান্তরক্ষী ‘নাসাকা’ বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয় না। বরং ফিরে আসতে চাইলে বাধা দেয়। আগে বাংলাদেশসহ অন্য দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করলে তারা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিজ দেশের নিজ গ্রামে সহজেই ঢুকে যেতে পারত। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া তৈরির ফলে এখন রোহিঙ্গারা সে সুযোগ পাচ্ছে না। মূলত এ লক্ষ্যেই বেড়া দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাযহারুল আনোয়ার চৌধুরী জানান, পাঁচ মাস ধরে পালংখালী, উলুবনিয়া, রহমতেরবিল গ্রামসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। আগে বিডিআর জওয়ানেরা অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের আটক করে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারে পুশব্যাক করতেন। তখন রোহিঙ্গারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে ঢুকে যেত। কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় রোহিঙ্গারা আর মিয়ানমারে ঢুকতে পারছে না।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ইউনুস বাঙ্গালী জানান, প্রতিদিন সীমান্তের জাদিমুরা, দমদমিয়া, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, হোয়াইক্যং, লেদাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশ ঢুকে পড়ছে। কিন্তু তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। টেকনাফ উপজেলায় ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। ফলে দেশের মানুষ বেকার হচ্ছে। বন-জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধকর্ম বেড়ে যাচ্ছে।
চোরাচালান বন্ধ করা
ভাইস-চেয়ারম্যান ইউনুস বাঙ্গালী জানান, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে ধান চাল চিংড়ি কাঠ ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। চোরাইপথে আসার কারণে আরাকানের সামরিক জান্তা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সে দেশে পাচার হয় ইউরিয়া সার, ডিজেল, ভোজ্যতেল, ওষুধ, সিমেন্ট, কাপড়চোপড়সহ দরকারি নানা পণ্য। এসব পণ্যে তাদের চাহিদা প্রবল বলে তারা সুবিধা আদায় করতে পারে না। বেড়া দিয়ে সামরিক জান্তা চোরাচালান বন্ধ করে এক জায়গা থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আর এ কারণে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, টেকনাফ ৪২ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের বিডিআর জওয়ানেরা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পাচারের সময় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার চোরাইপণ্য জব্দ করেছেন। এ সময় ১১ পাচারকারীসহ ১৯টি নৌকা জব্দ করা হয়। টেকনাফ ৪২ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর শাহীনুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
উখিয়া-টেকনাফ (কক্সবাজার-৪) আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়ায় বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে চোরাইপণ্য পাচার বন্ধ হবে।
তবে স্থানীয় সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বাঁধ এবং বাঁধের ওপর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারে না। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে।
গত রোববার সকালে উখিয়া উপজেলার বালুখালী ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করে মিয়ানমারের তুমব্রু, বলিবাজার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া তৈরির দৃশ্য দেখা গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্রধারী সীমান্তরক্ষীরা কাজের তদারক করছেন।
জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে তিনি সম্প্রতি সরকারের কাছে আট দফা সুপারিশ পেশ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, কক্সবাজার জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করে এক জায়গায় নিয়ে আসা, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুশব্যাক জোরদার, সীমান্তে বিডিআরের নজরদারি, নাফ নদে কোস্টগার্ডের টহল বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
(সৌজন্যে: প্রথম আলো, ০৭ অক্টোবর ২০০৯)