শনিবার, অক্টোবর ৩১, ২০০৯

প্রসঙ্গ : বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রীতি

মাধ্যমিক স্তরের সহায়ক বইয়ের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থার সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের বইয়ে ইংরেজি অনুবাদ (Translation) অংশে ক্রিয়ার কাল অনুযায়ী ঘটমান বর্তমান কালের (Present Continuous Tense) উদাহরণ স্বরূপ নীচের বাক্যগুলো লেখা হয়েছে :

তাহারা খেলতেছে
আমরা ইংরেজি শিখতেছি
মা ভাত রান্না করতেছে
পাখিটি আকাশে উড়তেছে

অনুরূপভাবে পুরাঘটমান বর্তমান কালের (Present Perfect Continuous Tense) উদাহরণ স্বরূপ ধরতেছে, দেখতেছে, বলতেছে ... এবং ঘটমান অতীত কাল (Past Continuous Tense) ও পুরাঘটমান অতীত কালের (Past Perfect Continuous Tense) উদাহরণ স্বরূপ রাঁধতেছিলাম, নাচতেছিল, লিখতেছিল, কাটতেছিল ... এ ধরেনর ক্রিয়াপদের উল্লেখ রয়েছে।

আমরা বাংলা ভাষার লেখ্য রূপের দু'টি রীতি অর্থাৎ সাধু ও চলিত রীতির কথা জানি। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, উপরের ক্রিয়াপদগুলো (underline দেওয়া) বাংলা ভাষার কোন রীতিতে পড়ে ?

এ ধরনের ক্রিয়াপদের ব্যবহার সাম্প্রতিক টেলিছবি ও নাটকগুলোতে পাত্র-পাত্রীর সংলাপে ব্যবহার হতে আমরা দেখেছি। অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীও শুদ্ধ (?) ভাষার কথ্য রূপে এ ধরনের ক্রিয়াপদ উচ্চারণ করে থাকেন।

তাই বলে নয়-সাধু, নয়-চলিত রীতির এইসব ক্রিয়াপদ পাঠ্য বইয়ে স্থান পাবে ? তাও আবার ভাষা ও ব্যাকরণ বইয়ের ক্রিয়ার কালের (Tense) উদাহরণ হিসাবে ?

তা হলে তো বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হতেই হয়।

বদলে দেওয়ার প্রস্তাব

আমরাতো 'প্রথম আলো'র উদ্যোগে শপথ নিয়েছিলাম যে, নিজে বদলে যাব এবং অপরকে বদলে দেব। আর 'বদলে যাও, বদলে দাও' -এই স্লোগানের উপর ভিত্তি করে আমি একটা প্রস্তাব উত্থাপন করছি। প্রস্তাবটা এই, আমাদের সম্মানিত ডাক্তাররা রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন ওষুধের নাম লিখে। ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নামের পরিবর্তে ওষুধের generic নাম লেখা যায় না ? যেমন: ওষুধের নাম Napa, Parapyral, Acee, Pyralgin, Aceta ইত্যাদির পরিবর্তে generic নাম Paracetamol BP 500mg লেখা যায় না ? জানি, এটা করতে গেলে ওষুধ কোম্পানি, ডাক্তার, ওষুধ ব্যবসায়ী প্রভৃতি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে বাধা আসবে। রোগী তথা জনসাধারণের স্বার্থে ওষুধ প্রশাসন তথা সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করলে আপামর জনগণ এর পক্ষে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এটা করা গেলে বদলে দেওয়ার একটা উৎকৃষ্ট নজির স্থাপিত হবে।

বেসরকারি, না বেদরকারি শিক্ষক?

বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকার এমপিও (মানথলি পেমেন্ট অর্ডার)-র মাধ্যমে মাসিক বাড়ি ভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা যথাক্রমে ১০০.০০ টাকা ও ১৫০.০০ টাকা করে দিয়ে থাকে। পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবাইকে নির্ধারিত এই একই পরিমাণ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এর মধ্যে একাধিকবার পে-স্কেল পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ নয় কি?

আমার জানা মতে, সকল সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরের অধিকাংশ চাকরিতে স্কেল অনুযায়ী মূল বেতনের নির্ধারিত শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। আমরা এও জানি যে, সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যার-যার বেতন স্কেল অনুযায়ী বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দেওয়া হয়। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো-কোনো প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে তাদের এমপ্লয়ীদের বছরে একাধিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও-র মাধ্যমে কোনো বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট)-ই পান না। অথচ আমরা বাসা-বাড়ির কাজের লোক কিংবা দোকানের কর্মচারীকে পর্যন্ত বছরে একাধিকবার বেতন বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। এমপিও-ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশের সব চাকরিতেই অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয় আর্থিক সুবিধা তথা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রদান করে। এতে করে ওই সমস্ত চাকরিতে একই স্কেলে যোগদান করলেও জুনিয়র-সিনিয়র চেনা যায় তাদের মূল বেতন (বেসিক) দেখে। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই স্কেলে যোগদানকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন (বেসিক) টাইম স্কেল না পাওয়া (৮ বছর পূর্ণ না হওয়া) পর্যন্ত একই থাকে। অর্থাৎ অর্বাচীন আর ৭ বছরের অভিজ্ঞ একই স্কেলের বেতনভোগীর মধ্যে মূল বেতনের কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সরকারই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব আর্থিক বঞ্চনার দিকগুলো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে দেখেনি।

কেবল এটুকু নয়, বঞ্চনার আরও নানা দিক আছে। যেমন; সরকারি কর্মচারীরা একই যোগ্যতায় চাকরি জীবনে অন্যূন ৩ বার (যথাক্রমে ৮, ১২ ও ১৫ বছর পর) টাইম স্কেল পান। অপর দিকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা পান মাত্র ১ বার (৮ বছর পর)। এত বৈষম্য কেন?

সরকার প্রদত্ত এমপিও-র টাকাও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা যথাসময়ে হাতে পান না। প্রতি মাসের বেতন পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সরকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এমপিও-র মাধ্যমে পাঠালেও আমলানির্ভর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মর্যাদাকাঙাল সদস্যদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে এর নগদায়ন হতে-হতে পরের মাসও শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। এ রকম আর্থিক দুরবস্থায় বেসরকারি শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কতটুকু আন্তরিক হবেন? এ সমস্ত কারণে তাঁরা এখন নিজেদের পরিচয় দেন 'বেদরকারি শিক্ষক' বলে।

প্রান্ত শ্রেণীর মানুষদের যাপিত জীবন!

মূলধারার মানুষ না হলে জীবন চলার পথে কত রকমের বিড়ম্বনায় যে পড়তে হয় তা ভুক্তভোগী মাত্র্রই জানেন। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চনার কাহিনীতো আরও দী্র্ঘ। প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হয়েও তাঁরা রাষ্ট্র কর্তৃক বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হন। এভাবেই তাঁরা এ জীবনকে যাপন করে চলেন। প্রজন্ম পরম্পরা এভাবেই কি চলতে থাকবে? ভিশন ২০২১-এ কি এসব ধর্মীয় ও ভাষাগত প্রান্তিক মানুষদের চিত্র প্রতিবিম্বিত হয়?

বাংলা বানান

আমি বাঙালি অর্থাৎ বাংলা ভাষাভাষির লোক নই, যেহেতু বাংলা আমার মাতৃভাষা নয়। তবে আমার লেখাপড়া ও পড়াশোনার মাধ্যম বাংলা। যেহেতু কিঞ্চিৎ লেখালেখির অভ্যাস আছে, তাই প্রচার মাধ্যমে ভুল বানানে বাংলা দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে।