শনিবার, অক্টোবর ৩১, ২০০৯

বেসরকারি, না বেদরকারি শিক্ষক?

বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকার এমপিও (মানথলি পেমেন্ট অর্ডার)-র মাধ্যমে মাসিক বাড়ি ভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা যথাক্রমে ১০০.০০ টাকা ও ১৫০.০০ টাকা করে দিয়ে থাকে। পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবাইকে নির্ধারিত এই একই পরিমাণ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এর মধ্যে একাধিকবার পে-স্কেল পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ নয় কি?

আমার জানা মতে, সকল সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরের অধিকাংশ চাকরিতে স্কেল অনুযায়ী মূল বেতনের নির্ধারিত শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। আমরা এও জানি যে, সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যার-যার বেতন স্কেল অনুযায়ী বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দেওয়া হয়। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো-কোনো প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে তাদের এমপ্লয়ীদের বছরে একাধিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও-র মাধ্যমে কোনো বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট)-ই পান না। অথচ আমরা বাসা-বাড়ির কাজের লোক কিংবা দোকানের কর্মচারীকে পর্যন্ত বছরে একাধিকবার বেতন বাড়িয়ে দিয়ে থাকি। এমপিও-ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশের সব চাকরিতেই অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয় আর্থিক সুবিধা তথা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রদান করে। এতে করে ওই সমস্ত চাকরিতে একই স্কেলে যোগদান করলেও জুনিয়র-সিনিয়র চেনা যায় তাদের মূল বেতন (বেসিক) দেখে। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই স্কেলে যোগদানকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন (বেসিক) টাইম স্কেল না পাওয়া (৮ বছর পূর্ণ না হওয়া) পর্যন্ত একই থাকে। অর্থাৎ অর্বাচীন আর ৭ বছরের অভিজ্ঞ একই স্কেলের বেতনভোগীর মধ্যে মূল বেতনের কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সরকারই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব আর্থিক বঞ্চনার দিকগুলো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে দেখেনি।

কেবল এটুকু নয়, বঞ্চনার আরও নানা দিক আছে। যেমন; সরকারি কর্মচারীরা একই যোগ্যতায় চাকরি জীবনে অন্যূন ৩ বার (যথাক্রমে ৮, ১২ ও ১৫ বছর পর) টাইম স্কেল পান। অপর দিকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা পান মাত্র ১ বার (৮ বছর পর)। এত বৈষম্য কেন?

সরকার প্রদত্ত এমপিও-র টাকাও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা যথাসময়ে হাতে পান না। প্রতি মাসের বেতন পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সরকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এমপিও-র মাধ্যমে পাঠালেও আমলানির্ভর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মর্যাদাকাঙাল সদস্যদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে এর নগদায়ন হতে-হতে পরের মাসও শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। এ রকম আর্থিক দুরবস্থায় বেসরকারি শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কতটুকু আন্তরিক হবেন? এ সমস্ত কারণে তাঁরা এখন নিজেদের পরিচয় দেন 'বেদরকারি শিক্ষক' বলে।

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

১.যারা বেসরকারি চাকরি করে তাদের সরকারি চাকরি করতে নিষেধ করছে কে?
২.তাদের যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা কি কোন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে পরে।
৩.কমিটি তার ইচ্ছামত অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেবে আর সরকার তাদের সমান সুযোগ দেবে?